হিমুভাই


#হিমু___
বাবা খুব আগ্রহ করে আমার নাম রেখেছিলেন হিমালয়। শর্টকাটে হিমু। সবার বাবা মা যেখানে চায় ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে, সেখানে আমার বাবা চেয়েছিলেন আমি যেন মহাপুরুষ হই।
আমার বাবা একটু পাগলা কিচিমের ছিলেন।
তবে এ ব্যাপারে তার একটা শক্ত লজিক ছিল।
প্রশিক্ষণ দিয়ে যদি ইঞ্জিনিয়ার, ডক্টর, বানানো যায় তাহলে " মহাপুরুষ " কেন বানানো যাবে না?
তিনি নিজেই মহাপুরুষ বানানোর একটি স্কুল খুলে ছিলেন। তিনি ছিলেন সেই স্কুলের পেনসিপাল আর আমি ছিলাম সেই স্কুলের একমাত্র ছাত্র। ১৯৯০ সালে "ময়ূরাক্ষীর" নদীর তীরে বেয়েই আমার পথ চলা শুরু..
হুমায়ূন আহমেদ আমার সম্পর্কে বলেছিলেন, হিমু দেখতে কেমন তাও আমি জানি না। হিমু দেখতে কেমন তা কোন বইয়ে স্পষ্ট বলা হয় নি। যা বলা হয়েছে তা খুবি সামান্য।
[ হিমুর চেহারা খুব একটা ভাল না, তবে তার চোখ এবং হাসি খুবই সুন্দর ]
এমনকি আজ রবিবার এর "তুহিন" এর মত হিমু হয়ে যাওয়া চরিত্র গুলো বারবার পর্দায় আসলেও সরাসরি তিনি হিমুকে কখনোই আনেন নি। এর একটা কারণ আছে, হুমায়ূন আহমেদ কখনোই চাননি, হিমু কোন নির্দিষ্ট অভিনেতা বা কোন নির্দিষ্ট চেহেরায় আটকে যাক। যেমন টা বাকের ভাই গিয়েছে। বরং তিনি সবসময় চেয়েছে যখন কোন পাঠক হিমু পড়বে, সে পাঠক যেন নিজের ভিতরে হিমু-কে দেখতে পায়। আর তাই তো সেই ৯০ এর দশক থেকে আজো মানুষ খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। আমার মত তরুনেরা হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে নিজেকে বলে হয়তো প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ আমার মত কোন হিমু কে-ই কল্পনা করেছিলেন। তাইতো চিরকাল হুমায়ূন আহমেদ এই হিমু চরিত্রের মাধ্যমেই সকলের হৃদয়ে বেচে থাকবে।
এই যে, আমার গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি টা দেখছেন এটা আমাকে রুপা দিয়েছে। পাঞ্জাবিটা হাতে নিয়ে আমি অবাক হলাম, রুপা কে প্রশ্ন করলাম..
রুপা পাঞ্জাবি তে পকেট নেই কেনো?
রুপা হাসতে হাসতে আমাকে জবাব দিলো, হিমু তুমি তো মহাপুরুষ হবে, তোমার তো কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন নেই, তবে তুমি পকেটে দিয়ে কি করবে? রুপা প্রায় আমাকে চিঠি লিখে তবে চিঠি গুলো আমি সাথে সাথে পড়ি না। অপেক্ষা করি...
অপেক্ষা করি প্রিয় সময়ের, কারণ প্রিয় মানুষের চিঠি প্রিয় সময়ে পড়তে হয়। আমি কখনো রুপার চিঠির জবাব দেই না। একদিন কি মনে করে ভাবলাম রুপা কে একটা চিঠি লিখবো অনেক ক্ষন কাগজ কলম নিয়ে বসে আছি, কিন্তু কি লিখবো তাই ভেবে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে পুরো পাতা জুড়ে একটি মাত্র শব্দ লিখলাম " রুপা তুমি কেমন আছো? "।
এর উত্তরে রুপা খুব রাগ করে আমাকে একটা চিঠি লিখেছিলো, আমি সেই চিঠি আজ সাথে রেখেছি আপনাদেরকে বলছি......
তুমি এতো পাগল কোনো? এতদিন পর একটা চিঠি লিখলে তার মধ্যেও পাগলামি! কেনো এমন করো?
তুমি কি ভাবো! এসব পাগলামি দেখে আমি তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসবো? তোমার কাছে আমি হাত জোর করে অনুরোধ করছি স্বাভাবিক মানুষের মত আচরণ করো। সেদিন দেখলাম দুপুরের কড়া রোদে কেমন পাগলের মত হাটছো। বিরবির করে আবার কিসব যেন বলছিলে । দেখে আমার কান্না পেয়ে গেলো। তোমার কি সমস্যা? আমাকে বলো।।
আমার সমস্যা কি আমি রুপাকে বলতে পারি? আমি তাকে বলতে পারি, আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমাকে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় হাটাতে হয়....!আমার যখন খুব মন খারাপ হয় তখন একটা নদীর স্বপ্ন দেখি। " ময়ূরাক্ষী " নদী। যে নদীটা একান্তই আমার। সেই নদীর তীর ঘেসে একজন তরুণী ছুটে যায়...
এই তরুণীটি আর কেউ না! আমার " মা "। যাকে আমার বাবা হত্যা করেছিলো। যেন মায়ের মায়া, মমতা, ভালবাসা, আদর স্নেহ, আমার মহাপুরুষ হওয়ার পথে বাধা না হয়ে থাকে। এই সব বলে কি হবে এর চেয়ে বরং #তরঙ্গ স্টোরে গিয়ে রুপাকে ফোন করা যাক। যদি রুপার বাবা ফোন ধরে, তাহলে আমি বলবো -হ্যালো এটা কি কমলাপুর রেলস্টেশ? আর যদি রুপা ধরে, তাহলে বলবো -রুপা তুমি কি সেই নীল শাড়ি টা পড়ে, চোখে কাজল দিয়ে ছাদের কার্নিশটা ধরে দাঁড়াবে? তোমাকে আজ খুব দেখতে ইচ্ছে করছে! রুপা জানে আমি আসবো না। তবুও রুপা খুব যত্ন করেই শাড়ি পড়বে, চোখে কাজলের ছোয়া দিবে, ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। আর আমি, আমি তো কোন সাধারণ ছেলে নয়। আমি তখন কোন অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে হাটবো, আর বিরবির করে বলবো " আমি ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া জোছনা ধরতে যা-ই, হাত ভর্তি চান্দের আলো ধরতে গেলে না-ই "।

Comments

Popular posts from this blog

সারজিসউদ্দিলার জমিদার বংশ।

যেতে চাইলে বলো!!!!!

স্বামী_স্তী